‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
ভক্ত বিনা প্রভুর অন্যত্র নাহি মন।।
ভুবন-পাবন সে প্রভুর ভক্ত যত।’’
সবাই ত,–ব্রহ্মাণ্ড তারিতে পারে
ভুবন-পাবন-গোরা হৃদে ধরে—সবাই ত,–ব্রহ্মাণ্ড তারিতে পারে
নিরূপম মহিমা কহিবে কেবা কত।।
অসংখ্য প্রভুর ভক্ত অন্ত কেবা করে।
জগত ছাইল সে ভক্তের পরিকরে।।
প্রভু প্রিয়পার্ষদ গোস্বমী-লোকনাথ।
আমার গুণের প্রভু লোকনাথ—সর্ব্ব-অগ্রে আগুয়ান
মধুর-শ্রীবৃন্দাবনে—সর্ব্ব অগ্রে আগুয়ান
যাঁহার চরিত্র চারু জগতেবিখ্যাত।।
তাঁর প্রিয়-শিষ্য নরোত্তম প্রেমময়।
যাঁর খ্যাতি জগতে ঠাকুর-মহাশয়।।’’
রেখেছিলেন পদ্মাবতী
প্রাণগৌর-দত্ত প্রেমধন—রেখেছিলেন পদ্মাবতী
তাঁরে দিলেন সেই প্রেমধন
নরোত্তমে দিলেন সেই প্রেমধন
গৌর-আজ্ঞা-মতে পদ্মাবতী—নরোত্তমে দিলেন সেই প্রেমধন
ছিলেন বটে কৃষ্ণবর্ণ—নরোত্তম হইলেন গৌরবর্ণ
গৌরের প্রেমধন পেয়ে—নরোত্তম হইলেন গৌরবর্ণ
তাঁর শিষ্য গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্ত্তী।’’
অদ্যপিও সেই-গ্রাম—গাম্ভিলা-নামে খ্যাতি
ঠাকুর-নরোত্তমের শেষ-অবস্থিতি—গাম্ভিলা-নামে খ্যাতি
পরম-পণ্ডিত যেঁহ প্রেমভক্তি-মূর্ত্তি।।
তাঁর শিষ্য চক্রবর্ত্তী শ্রীকৃষ্ণচরণ।
প্রেমময়-রামকৃষ্ণাচার্য্যের নন্দন।।
শ্রীরামচরণ চক্রবর্ত্তী শিষ্য তাঁর।
সর্ব্বাংশে প্রবীণ অতি শুদ্ধ-ভক্তি যাঁর।।
তাঁর প্রিয়শিষ্য বিশ্বনাথ দয়াময়।’’
বিশ্বনাথ দযাময়—ঠাকুর-নরোত্তমের গণ হয়
যাঁর জন্মকালে হইল সবার বিস্ময়।।
জন্ম-ঘরে তেজঃপুঞ্জ অগ্নির সমান।
ক্ষণেক থাকিয়া তাহা কৈল অন্তর্দ্ধান।।’’
ঠাকুর-বিশ্বনাথ গৌরাঙ্গ-শকতি—ইঙ্গিতেতে প্রকাশ হয়
বালক দেখিয়া সুখ বাড়িল সবার।
মধ্যে মধ্যে বালকের দেখে চমৎকার ।।
সর্ব্বত্র বিদিত প্রসংশয়ে সর্ব্বজনে।
অল্পকালে বিতক্ষণ হৈলা ব্যাকরণে।।
দেবগ্রামী-পণ্ডিতের যাঁহে হৈল ভয়।
সেই দিগ্বিজয়ী বিশ্বনাথ কৈলা জয়।।
হইলা সুখ্যাতি ইথে লজ্জা বহু পাইলা।
শ্রীমদ্ভাগবত পড়িবারে ভ্রাতা আজ্ঞা দিলা।।
পাঠ সাঙ্গ করি’ ভ্রাতার আগে দাঁড়াইলা।
বৃন্দাবনে যাইবারে আজ্ঞা মাগিলা।।
ভ্রাতা-রামচন্দ্র সুখে আজ্ঞা তারে দিলা।
সেইক্ষণে বিশ্বনাথ বিদায় হইলা।।’’
ঠাকুর-নরোত্তমের প্রাণধন—প্রাণ-নিতাই-গৌর বলে
ব্রজভূমি ভ্রমি’ কৈল রাধাকুণ্ডে বাস।
ব্রজবাসী-বৈষ্ণবের হইল উল্লাস।।
কৃষ্ণদাস-কবিরাজ-গোস্বামীর স্থানে।
শ্রীমুকুন্দদাস কৈলা গোস্বমি-গ্রন্থ অধ্যয়নে।।
তাঁর অপ্রকটে বিশ্বনাথেরে পাইয়া।’’
মুকুন্দদাস বহুকৃপা কৈলা হর্ষ হইয়া।।
কতদিনে বিশ্বনাথ শ্রীকুণ্ড হইতে।
গৌড়ে গেলা শ্রীগুরুদেবের আজ্ঞা-মতে।।
গুরু-আজ্ঞা পত্নীসহ করিতে শয়ন।
শুতিয়া করিলা সুখে শ্রীনাথ-কীর্ত্তন।।
বিকার-রহিত বিশ্বনাথ-চক্রবর্ত্তী।
যৈছে তার স্পর্শ নহে কৈল তৈছে রীতি।।
‘‘রজনী-প্রভাতে জীর্ণ-কম্বল উড়িয়া।
বাসায় আসিয়া করিলেন প্রাতঃক্রিয়া।।
সবার বিস্ময় শুনি’ ঐছে রাত্রিবাস।’’
শিষ্য জিতেন্দ্রিয় ইথে ইষ্টের উল্লাস।।’’
শিষ্য জিতেন্দ্রিয়—লোকমুখে ব্যবহার শুনি’
শ্রীমদ্ভাগবত ইষ্টদেবে লিখি দিল।।
লিখনের কালে অতি কৌতুক হইল।।
একদিন এক-সরোবর-সন্নিধানে।
বসিয়া লিখেন পুঁথি ছায়াহীন-স্থানে।।
লিখিতে লিখিতে প্রেমানন্দে মগ্ন হৈলা।
হৈল যে মেঘবৃষ্টি কিছু না জানিলা।।’’
দেহ স্মৃতি নাহি যার—সংসার-কূপ কাঁহা
গুরু-আজ্ঞা লইয়া পুনঃ বৃন্দাবন আসি’।
বর্ণিলেন বহুগ্রন্থ রাধাকুণ্ডে বসি’।।’’
দাস-গোস্বামীর চরণ সঙরিয়ে
‘‘বর্ণিলেন বহুগ্রন্থ রাধাকুণ্ডে বসি’।।
শ্রীভাগবত, গীতা, উজ্জ্বল-নীলমণি।
এ-সবার করিলেন মধুর-টিপ্পনী।।
শ্রীরূপের মনোহভীষ্ট স্থাপন করিলা।
শ্রীরূপের অবতার বলি’ খ্যাত হৈলা।।
শ্রীকৃষ্ণ-ভাবনামৃত, শ্রীগীত-চিন্তামণি।
কৈলা যাহা ভজন-সোপান করি’ মানি।।
গৌরাঙ্গের গূঢ়তত্ত্ব করিতে প্রকাশ।
কৃপা করি’ প্রকাশিলেন স্বপ্নবিলাস।।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য-প্রভুর গোবর্দ্ধন-শিলা।’’
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য-প্রভু—যা—কৃপা করি’ রঘুনাথে দিয়াছিলা
শ্রীগোকুলানন্দ বিশ্বনাথে কৃপা কৈলা।।
গোবর্দ্ধনশিলা-শোভা কহন না যায়।
অদ্যাপিহ গোকুলানন্দ-পাশে বিলসয়।।
শ্রীরাধিকা বিশ্বনাথে স্বপ্নে দেখা দিলা।
কামগায়ত্রীর ব্যাখ্যা আপনি করিলা।।’’
শ্রীরাধারাণী বিশ্বনাথে—স্বপনে দেখা দিলা
শ্রীবিশ্বনাথের নাম শ্রীহরিবল্লভ।
গীতের আভোগে ব্যক্ত করে বিজ্ঞ-সব।।
ওহে নাথ বিশ্বম্ভর পতিত-পাবন।’’
প্রেমেতে আবিষ্ট হয়ে—বিশ্বনাথ কীর্ত্তন করেন
ওহে নিত্যানন্দ-প্রভু দয়ার ভবন।।
হা হা অদ্বৈতদেব কৃপাসিন্ধু-মূর্ত্তি।
হা হা গদাধর-প্রভু প্রভুর নিজ-শক্তি।।
হা হা হরিদাস হে শ্রীবাস বক্রেশ্বর।
মুকুন্দ মুরারি নবদ্বীপ-পরিকর।।’’
গুণবিধি বিশ্বনাথ—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
হেনকালে জন্ম কেন লভিনু মুঁই ছার।।’’
গৌরগণ-গৌরাঙ্গ-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
কৃপার সমুদ্র মোর প্রভু শ্রীনিবাস।
শ্যামানন্দ রামচন্দ্র নরোত্তম-দাস।।
এ-সব গৌরাঙ্গগণ প্রকট যখন।
তখন নহিল মোর এ-দুঃখী জনম।।’’
কিছুই দেখতে পেলাম না রে
পূর্ব্বলীলা পরলীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
এইখানে প্রভু মোর বিশ্বনাথদেব।
হা হা রূপ সনাতন বলি’ করে খেদ।।
শ্রীজীব গোপালভট্ট বলিয়া কান্দয়।
ভট্টরঘুনাথ দাসরঘুনাথ ছয়।।’’
হা গৌরগণ বলে—ব্যাকুল হয়ে বিশ্বনাথ কাঁদে
না দেখিনু মুঞি এই প্রকট-বিহরে।।’’
কিছুই দেখতে পেলাম না
ব্যাকুল হয়ে বিশ্বনাথ কেঁদে বলে—কিছুই দেখতে পেলাম না
প্রাণ-গৌরলীলা তার গণের খেলা—কিছুই দেখতে পেলাম না
তোমরা সকল বিনা শ্রী–গৌরাঙ্গ।”
গুণনিধি প্রাণ-গৌরাঙ্গগণ
এ-হেন-দুঃখীরে কেবা করাবে শ্রবণ।।’’
প্রাণারাম-গৌরকথা বিনে—এ-দগ্ধহৃদয় কেমনে জুড়াবে
না শুনিলু সে না মুখ-অমৃত-বচন।’’
গুণনিধি প্রাণ-গৌরাঙ্গগণ
না দেখিনু সেই-সব-কমলচরণ।।
গৌরাঙ্গ-ললিত-লীলা শুনি কার কাছে।
মোর রূপ সনাতন সদা যাহা যাচে।।’’
গৌরাঙ্গ-ললিত-লীলা—আর কার কাছে শুনিব
রূপ সনাতন যাহা যাচে—আর কার কাছে শুনিব
এ-সব-বিলাপ করি’ কাঁদে বিশ্বনাথ।
দেখিনু শুনিনু কত পিতার সাক্ষাৎ।।’’
প্রাণ-গৌরগণের গুণের কথা—শুনেছি শ্রীগুরুদেবের কাছে
‘প্রাণ-গৌরগণের গুণের কথা’—
গৌরাঙ্গ-লীলা-কথা—প্রাণ-গৌরগণের গুণের কথা
শ্রীগুরুদেবের মুখে শুনেছিলাম
কোথা গেলা মোর চক্রবর্ত্তি-মহাশয়।।
বৃন্দাবনে কুঞ্জে কুঞ্জে যার গুণ শুনি।
সে হেন হারানু মুঞি পাঞা চিন্তামণি।।
এ-হেন-দয়ালু-প্রভু মোরে ছাড়ি’ গেল।
না সেবিনু সে না পদ রহি গেল শেল।।
এ-সকল পদাম্বুজে বঞ্চিত হইনু।
জন্মিয়া এবার মুঞি কিবা কর্ম্ম কৈনু।।
আপতিত-উদ্ধারক গৌরাঙ্গ আমার।
বিশ্বনাথের পাদপদ্ম দেখাবে কি আর।।
মোর প্রাণনাথ বিশ্বনাথ দয়াময়।
বিশ্ব পালিলেন তেঁহ হইয়া সদয়।।
অযাচকে প্রেমভক্তি-রত্ন কৈল দান।
সর্ব্বত্র লওয়াইল গৌর-কৃষ্ণভগবান্।।
নিজ-পাত্র শেষ মোরে দিয়া দয়াময়।
বলেন কৃপা কর শ্রীঠাকুর-মহাশয়।।’’
সগণে গৌরগুণে মত্ত কর—ঠাকুর-নরোত্তম কৃপা কর
কৃপা করি’ মোর সাথে ধর শ্রীচরণ।।
তোমা সবার কৃপাতে যেন বঞ্চিত না হই।
বিশ্বনাথ-পাদপদ্ম দেখিবারে চাই।।
এত কহি নরহরি আধোমুখ করি’।
কাঁদয়ে উচ্চৈঃস্বরে ফুকারি ফুকারি।।’’
ঠাকুর-বিশ্বনাথের গুণ গাই—আয় ভাই সবে মিলে
গুরুদেবের প্রেরণায় বলি—অতিগূঢ়-কথা ভাই
জয় জয় বিশ্বনাথ চক্রবর্ত্তী
শ্রীজীবের,–গুপ্ত-বাসনা পূরণ-মূর্ত্তি—জয় জয় বিশ্বনাথ চক্রবর্ত্তী
ব্রজের,–শুদ্ধ-পরকীয়া-রস—বিশ্বনাথ-দ্বারে ব্যক্ত কৈলা
‘শুদ্ধ-পরকীয়া-রস’
শ্রীচৈতন্য-মনোবৃত্তি—শুদ্ধ-পরকীয়া-রস
‘শুদ্ধ-পরকীয়া-রস’—
যা,–যোগমায়া কৈলা ঘটন—শুদ্ধ-পরকীয়া-রস
আপনার মনোবৃত্তি—শ্রীরূপের দ্বারে প্রকাশ কৈলা
বিশ্বনাথের দ্বারে জগতে দিলা—শ্রীরূপের দ্বারে প্রকাশ কৈলা
জয় বিশ্বনাথ-চক্রবর্ত্তী আমার
শ্রীজীবের মনোবৃত্তি-অবতার—জয় বিশ্বনাথ-চক্রবর্ত্তী আমার
ঠাকুর-নরোত্তমের-গণ—এইবার মোদের কৃপা কর
ঠাকুর-নরোত্তমের গণ—বিশ্বনাথ কৃপা কর
অতঃপর মহাজনী আক্ষেপ-কীর্ত্তন—
…………………………………………………………………………
…………………………………………………………………………
ওরে রে নিলাজ-পরাণ—নিশিদিশি ডাক রে
ওরে রে কৃতঘ্ন-পরাণ—নিশিদিশি ডাক রে
অহৈতুকী-কৃপা সঙরি—ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে
‘অহৈতুকী-কৃপা সঙরি’—
অদোষ-দরশী-শ্রীগুরুদেবের—অহৈতুকী-কৃপা সঙরি
কণ্ঠহার কর রে
যদি,–দগ্ধহৃদয় জুড়াইতে চাও—কণ্ঠহার কর রে
শ্রীগুরু-কৃপাদত্ত নামাবলী—কণ্ঠহার কর রে
‘শ্রীগুরু-কৃপাদত্ত নামাবলী’—
সাধ্য সাধন নির্ণয়-করা—শ্রীগুরু-কৃপাদত্ত নামাবলী
প্রাণভরে গাও রে
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
গৌরহরি-রোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।।
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।’’