শ্রীরূপের বড় ভাই সনাতন গোসাঞি
পাতশার উজীর হৈয়াছিলা।
শ্রীরূপের পত্রী পাইয়া বন্দী হইতে পলাইয়া
কাশীপুরে গৌরাঙ্গে ভেটিলা।।
ছিঁড়া বস্ত্র অঙ্গ মলি হাতে নখ মাথে চুলি
নিকটে যাইতে অঙ্গ হালে।
দুই গুচ্ছ তৃণ করে এক গুচ্ছ দন্তে ধরে
পড়িলা গৌরাঙ্গ পদতলে।।
দরবেশ রূপ দেখি প্রভুর সজল আঁখি
বাহু পসারিয়া আইসে ধাঞা।
সনাতনে করি কোলে কাতরে গোসাঞি বলে
মো অধমে স্পর্শ কি লাগিয়া।।
অস্পর্শ পামর দীন দুরাচার মন্দ হীন
নীচ সঙ্গে নীচ ব্যবহার।
এ হেন পামর জনে স্পর্শ প্রভু কি কারণে
যোগ্য নহোঁ তোমা স্পর্শিবার।।
ভোট-কম্বল দেখি গায় প্রভু পুন পুন চায়
লজ্জিত হইয়া সনাতন।
গৌড়িয়ারে ভোট দিয়া ছিঁড়া এক কাঁথা লৈয়া
প্রভু স্থানে পুন আগমন।।
গৌরাঙ্গ করুণা করি রাধাকৃষ্ণ মাধুরী
শিক্ষা করাইলা সনাতনে।
প্রভু কহে রূপ সনে দেখা হবে বৃন্দাবনে
প্রভু আজ্ঞায় করিলা গমনে।।
কভু কান্দে কভু হাসে কভু প্রেমানন্দে ভাসে
কভু ভিক্ষা কভু উপবাস।
ছেঁড়া কাঁথা নাড়া মাথা মুখে কৃষ্ণ নাম গাঁথা
পরিধান ছেঁড়া বর্হিবাস।।
গিয়া গোসাঞি সনাতন প্রবেশিলা বৃন্দাবন
রূপ সঙ্গে হইল মিলন।
ঘর্ম্ম অশ্রু নেত্রে পড়ে সনাতনের পদধরে
কহে রূপ গদগদ বচন।।
গৌরাঙ্গের যত গুণ কহে রূপ সনাতন
হা নাথ হা নাথ বলি ডাকে।
ব্রজপুরে ঘরে ঘরে মাধুকরি ভিক্ষা করে
এইরূপে কথো দিন থাকে।।
কথো দিন তাহা ছাড়ি কুঞ্জে কুঞ্জে রহে পড়ি
ফল মূল করয়ে ভক্ষণ।
উচ্চস্বরে আর্ত্তনাদে রাধাকৃষ্ণ বলি কান্দে
এইরূপে দিবস যাপন।।
কথো দিন অন্তর্মনা ছাপ্পান্ন দণ্ড ভাবনা
চারি দণ্ড নিদ্রা বৃক্ষতলে।
স্বপ্নে রাধাকৃষ্ণ দেখে নামগুণে সদা থাকে
অবসর নাহি এক তিলে।।
কখন বনের শাক অলবণে করে পাক
মুখে দেন দুই চারি গ্রাস।
ছাড়িয়া ভোগ বিলাস তরুতলে কৈলা বাস
এক দুই দিন উপবাস।।
সূক্ষ্ম বস্ত্র বাজে গায় ধূলায় লোটায় কায়
কন্টকে বাজয়ে কভূ পাশ।
এ রাধাবল্লভ দাস বড় মনে অভিলাষ
কবে হব তার দাসের দাস।।