যমুনা কিনারে

মাধব কি কহব তাহী

মাধব কি কহব তাহী।
তুঅ গুন লুবুধি-মুগুধ ভেলি রাহী।।
মলিন বসন তনু চীরে।
করতল কমল নয়ন ঢরু নীরে।।
উর পর সামরী বেনী।
কমলকোষ জনু কারি লগেনী।।
কেও সখি পরিখয় শাসে।
কেও নলনী দল করয় বতাসে।।
কেও বোল আয়ল হরী।
সসরি উঠলি চির নাম সুমরী।।
বিদ্যাপতি কবি গাবে।
বিরহ বেদন নিঅ সখি সমুঝাবে।।

অন্তঃকথন:
মাধবকে দেখে শ্রীরাধিকার দেহে-মনে পূর্বরাগের সকল লক্ষণগুলি ফুটে উঠেছে! সখীগণ দূতী হয়ে মাধবের কাছে তারই বর্ণনা দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, মাধব তাকে কিই বা বলব? সে যে তোমাকে দেখে অবধি কোন কথা শোনার অবস্থাতেই নেই! তোমার গুণে লুব্ধা রাই মুগ্ধা হয়ে আছে, অর্থাৎ শ্রীমতীর মন মোহগ্রস্ত, জ্ঞানশূন্য! বেশবাসে তার মন নেই। দেহে মলিন বসন, করতলে মুখ রেখে বসে কেবল তোমার কথাই ভাবছে, আর তার দুনয়ন থেকে অবিরলে অশ্রুধারা ঝরে পড়ছে! কেশসজ্জা করার কথা সে যেন ভুলেই গেছে, একটি মাত্র কৃষ্ণবর্ণ বেণী তার বুকের ওপরে পড়ে আছে, দেখে মনে হচ্ছে যেন কুচকমলকোষে কালী-নাগিনী। তার অবস্থা দেখে মাঝে মাঝে ভয় করছে, প্রাণ আছে তো? কোন সখী ভয় পেয়ে তার নিশ্বাস বইছে কিনা পরীক্ষা করছে, কেউ বা আবার পদ্মপাতায় বাতাস করছে, যদি তাতে শ্রীমতীর একটুও আরাম হয়! কেউ আবার ইচ্ছে করে বলছে, ওই হরি আসছেন! আর তখনই, এমন যে মৃতপ্রায় আমাদের সখী, তোমার চিরপরিচিত নাম শুনে, ব্যস্ত হয়ে উঠছেন! তাহলেই বুঝে দেখো মাধব তোমার প্রেমে আমাদের রাই কমলিনীর কি দশা হয়েছে! বিদ্যাপতি গাইছেন, সখী মাধবকে রাধিকার বিরহ-বেদনার গুরুত্ব বোঝাচ্ছেন!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী