যমুনা কিনারে

মাধব করিঅ সুমুখি সমধানে

মাধব করিঅ সুমুখি সমধানে।
তুঅ অভিসার কএল জত সুন্দরি
কামিনি করএ কে আনে।।
বরিস পয়োধর ধরনি বারি ভর
রয়নি মহা ভয় ভীমা।
তইঅও চললি ধনি তুঅ গুন মনে গুনি
তসু সাহস নহি সীমা।।
দেখি ভবন ভিতি লিখল ভুজগপতি
জসু মনে পরম তরাসে।
সে সুবদনি করে ঝপইত ফনিমনি
বিহুসি আইলি তুঅ পাসে।।
নিঅ পহু পরিহরি সঁতরি বিখম নরি
আঁগরি মহাকুল গারী।
তুঅ অনুরাগ মধুর মদে মাতলি
কিছু ন গুনল বর নারী।।
ই রস রসিক বিনোদক বিন্দক
সুকবি বিদ্যাপতি গাবে।
কাম পেম দুহু এক মত ভএ রহু
কখনে কী ন করাবে।।

অন্তঃকথন:
রাধারানী যে কত কষ্ট সহ্য করে মাধবের কাছে এসেছেন তার সবটা মাধব কি আর জানেন! জানেন কেবল সখী। সখীই বোঝেন শ্রীমতীর মর্মযাতনা। সখী তাই মাধবকে বলছেন মাধব যেন শ্রীমতীকে নিরাশ না করেন। সখী বলছেন, মাধব, তুমি সুমুখীর মনস্কামনা পূর্ণ করো। সুন্দরী তোমার অভিসারে যত কষ্ট করেছে তা আর কোন কামিনী করতে পারে বল? মেঘ বারি ধারা বর্ষণ করছে, ধরণী জলে পরিপূর্ণ আর রজনী অতি ভয়ঙ্কর! এত কিছু সত্ত্বেও ধনী শুধু তোমার গুণের কথা মনে করে অগ্রসর হোল, তাঁর সাহসের সীমা নেই! যে ঘরের দেওয়ালে আঁকা সাপ দেখলেও ভয় পায়, সেই সুমুখী সাপের মাথার মণি হাত দিয়ে ঢেকে নিল, পাছে সেই মণির আলোয় তাঁর গুপ্ত অভিসার কেউ দেখে ফেলে।আর এত কিছুর পরও সে সস্মিত মুখে তোমার কাছে এল! সে নিজের স্বামীকে ছেড়ে বিষম নদী সাঁতরে, কূলের কলঙ্ক অঙ্গীকার করে তোমার কাছে এসেছে, অনুরাগে মত্ত হয়ে সে প্রতিকূল প্রকৃতি বা সমাজ কিছুই মনে গণনা করেনি। সখী মাধবকে বলতে চাইছেন এত যে দুঃসাধ্য সাধন করেছে রাধারানী শুধু তোমার জন্য, তার কামনা তুমি অপূর্ণ রেখো না মাধব! রাধারানীর দুঃসাহসী অভিসারের বর্ণনা শুনে এই রসের রসিক সুকবি বিদ্যাপতি মন্তব্য করছেন, কাম ও প্রেম দুইই একমত হলে কী না করাতে পারে!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী