যমুনা কিনারে

প্রথম সিরিফল গরবে গমওলহ

প্রথম সিরিফল গরবে গমওলহ
জৌঁ গুন-গাহক আবে।
গেল জৌবন পুনু পলটি ন আবএ
কেবল রহ পছতাবে।।
সুন্দরি, বচনে করহ সমধানে।
তোহ সনি নারি দিবস দস অছলিহু
ঐসন উপজু মোহি ভানে।।
জৌবন রূপ তাবে ধরি ছাজত
জাবে মদন অধিকারী।
দিন দস গেলে সখি সেহও পড়াএত
সকল জগত পরচারী।।
বিদ্যাপতি কহ জুবতি লাখ লহ
পড়ল পয়োধর-তূলে।
দিন দিন অগে সখি ঐসনি হোয়বহ
ঘোসিনী ঘোরক মূলে।।

অন্তঃকথন:
এই পদে যে সখী রাধিকাকে কৃষ্ণ মিলনের জন্য অনুপ্রাণিত করছেন তিনি বিগত যৌবনা, তাই বার বার করে শ্রীমতীকে যৌবনের মূল্য সম্পর্কে অবহিত করার চেষ্টা করছেন! রাধিকাকে সখী বোঝাচ্ছেন, একবার গেলে এ যৌবন আর ফেরে না, তাই যৌবনের উপযুক্ত প্রণয় থেকে মুখ ফিরিয়ে থেকো না রাই! সখী বলছেন, যখন তোমার প্রথম শ্রীফল, নূতন স্তনযুগল নূতন যৌবন এল,তখন সে যৌবনের গুণগ্রাহীও এলো! অথচ তুমি যৌবনগর্বে তার দিকে ফিরেও তাকালে না! শোনো রাই, যৌবন একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না, তখন কেবল পশ্চাত্তাপ থাকে! সুন্দরি! তুমি মন দিয়ে শোনো তোমার মত আমিও যুবতী ছিলাম! কিন্তু সে মাত্রই যেন দিন দশেক বলে আমার মনে হয়! যৌবন আর রূপ তত দিনই শোভা পায় যত দিন কন্দর্প তার অধিকারী থাকেন, সহায় থাকেন! দিনদশ গেলে সখী সেও পালিয়ে যাবে, এ কথা সমস্ত জগৎ জানে! বিদ্যাপতি সখীর কথার প্রতিধ্বনি করে বলছেন, লক্ষ লক্ষ যুবতী পয়োধর-তূলে পড়ল! অর্থাৎ কত কত যুবতীর পয়োধর বয়সের তুলাযন্ত্রে পরিমাপিত যে হল! গোয়ালিনীর ঘোলের মূল্য যেমন বাসি হলে কমে যায় তেমনি যুবতীর গৌরবও দিনে দিনে হ্রাস পায়! অর্থাৎ শ্রীমতী এই যৌবন থাকতে থাকতে তুমি তাকে উপভোগ কর, এই যৌবন উপবনে যে মাধব অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁকে নিরাশ কোরো না, তাহলে এককালে তোমাকেই অনুতাপ করতে হবে!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী