যমুনা কিনারে

প্রথম সমাগম ভুখল অনঙ্গ

প্রথম সমাগম ভুখল অনঙ্গ।
ধনি বল জানি করব রতিরঙ্গ।।
হঠ নহি করবে আইতি পাএ।
বড়েও ভুখল নহি দুহু কর খাএ।।
চেতন কাহ্ন তোঁহহি যদি আথি।
কে নহি জান মহতে নত হাথি।।
তুঅ গুন গন কহি কত অনুবোধি।
পহিলহি সবহি আনল পরবোধি।।
হঠ নহি করব রতি পরিপাটি।
কোমল কামিনি বিঘটতি সাটি।।
জাবে রভস সহ তাবে বিলাস।
বিমতি বুঝিঅ জয়ঁ ন জাএব পাস।।
ধসি পরিহরি নহি ধরবিএ বাহু।
উগিলল চাঁদ গিলএ জনি রাহু।।
ভনই বিদ্যাপতি কোমল কাঁতি।
কোমল সিরিস সুমন অলি ভাঁতি।।

অন্তঃকথন:
কানাই আমাদের রসিক প্রেমিক। রমণরণে সুপটু। সেই কানাই আবার মদনানলে দগ্ধ। শ্রীমতীর সঙ্গে প্রথম মিলনে তিনি অধৈর্য হয়ে কি যে করে বসবেন সেই সখীদের চিন্তা! কারণ রাইকমলিনী কোমলা কিশোরী। কামকলার রীতিনীতি কিছুই জানেন না তিনি। সখীরা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন ঠিকই, তবু সখীদের চিন্তা যায় না, তাই তাঁরা মাধবকেও বোঝাচ্ছেন, সুকোমল নবীনা কিশোরীর সঙ্গে প্রথম মিলনে ঠিক কেমন পথে চললে শ্যামেরও আশা মেটে আবার রাধিকাও আনন্দিত হন! এ মিলন যে রাধা-মাধবের মিলন, এ কে যে ব্যার্থ হতে দেওয়া যায় না! সখীরা তাই মাধবকে বলছেন, হে মাধব প্রিয়ার সঙ্গে প্রথম সমাগমের এই কালে তোমার অন্তরে অনঙ্গ ক্ষুধার্ত হয়ে আছেন সে কথা জানি, কিন্তু তবুও তুমি রাধারানীর শক্তি বুঝে রতিরঙ্গে মেতো! তাকে নিজের আয়ত্তে পেয়ে যেন হঠকারীর মত বলপ্রয়োগ করে বোসো না! মনে রেখো, অতিশয় ক্ষুধার্ত ব্যক্তিও কখনো দু হাতে খায় না! তুমি তো প্রেম চতুর মাধব! কে না জানে মাহুত হাতীকে বশ করে বলে নয়, ছলে! তুমিও তেমনি কৌশলে শ্রীমতীতে বশীভূত কোরো! তোমার গুণগান করে, কত বুঝিয়ে, প্রবোধ দিয়ে তবে রাধারানীকে কুঞ্জে এনেছি! তুমি যেন বল প্রয়োগ করে আমাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যার্থ করে দিয়ো না! বলপ্রয়োগ করলে রতির আকাঙ্ক্ষিত আনন্দ লাভ হয় না! কোমল রমণীর ওপর জোর করলে তাকে কেবল শাস্তিই দেওয়া হয়, রমণ হয় না! যতক্ষণ রাই সহ্য করতে পারবে ততক্ষণই কেলি কোরো! রাইকে অনিচ্ছুক দেখলে আর তার কাছে যেও না! রাহু চাঁদকে একবার উগরে দিয়ে আবার গ্রাস করে, তুমি যেন সেরকম কোরো না। একবার মিলন সমাপ্ত হলে আবার যেন ছুটে গিয়ে তার হাত ধোরো না! সখীদের কথায় সায় দিয়ে বিদ্যাপতি বলছেন, কোমলকান্তি শিরিষ ফুলকে মধুকর যেমন কৌশলে উপভোগ করে, তুমিও তেমনি সযতনে সুকৌশলে রাইকমলিনীর মধু পান কোরো!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী