যমুনা কিনারে

পহুক বচন ছল পাথর রেখ

পহুক বচন ছল পাথর রেখ।
হৃদয় ধএল নহি হোএত বিসেখ।।
নাগর ভমর দূহূ এক রীতি।
রস লএ নিরসি করএ ফিরি তীতি।।
ও পহিলহি বোল তোহেহি পরান।
পথ পরিচয় নহি রাখ নিদান।।
জৌবন অবধি রাখ অনুবন্ধ।
আগিলা বিসয় অধিক পরবন্ধ।।
ও বৈসইত কত কর অবধান।
অতি সানন্দ ভএ কর মধুপান।।
উড়ইত ভর দে ন কর সম্ভাস।
আগিলা কুসুম অধিক অভিলাস।।
কি কহব মাই হে বুঝত অনেক।
নাগর ভমর দুঅও অবিবেক।।
ভনই বিদ্যাপতি সুন বরনারি।
পেমক রসে বস হোঅ মুরারি।।

অন্তঃকথন:
বহুবল্লভ মাধব অন্যনারীর প্রেমে রাধারানীকে ভুলেছেন। রাগে, দুঃখে, অভিমানে রাধারানী বলছেন, মনে ভেবেছিলাম প্রভুর কথা বুঝিবা পাষাণের রেখার মত, সে কথার নড়চড় হবে না। কিন্তু দেখলাম নাগর আর ভ্রমর দুইএরই রীতি এক। রসটুকু পান করে নীরস আর তিক্ত করে ছেড়ে চলে যায়। প্রথমে সে বলল ‘তুমিই প্রাণ’, শেষ কালে পথে দেখা হলেও কথা বলে না। যতদিন যৌবন ততদিন তার আগ্রহ, একজন ফুরোলে পরবর্তী জনের প্রতি তার আদর বেড়ে যায়। ভ্রমর ফুলে বসে কত মনযোগ দিয়ে, কত যত্নে আনন্দিত হয়ে মধুপান করে, কিন্তু মধুপান শেষ হলে পায়ে ঠেলে উড়ে চলে যায়, সম্ভাষণটুকুও করে না। পরে যে কুসুম আছে তার দিকেই অধিক অভিলাষ নিয়ে ছুটে যায়। কি আর বলব মা, নাগর আর ভ্রমর দুইই বিবেচনাশূন্য! রাধারানীর রোষবাক্য শুনে, মাধবের দোষে আড়াল করে বিদ্যাপতি বলছেন, বরনারী শোনো, মুরারি আমাদের প্রেমের রসে বশীভূত হন!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী