যমুনা কিনারে

পরক বিলাসিনি তুঅ অনুবন্ধ

পরক বিলাসিনি তুঅ অনুবন্ধ।
আনলি কত ন বচন কএ ধন্ধ।।
কোনে পরি জইতি নিঅ মন্দির রামা
অতিসয় চিন্তা ভেলি এহি ঠামা।।
নিকটহু বাহর ডরে ন নিহার।
জতনে আনলি এত দুর অভিসার।।
তিলা একজা সয়ঁ মহঘ সমাজ।
বহলি বিভাবরি মনে নহি লাজ।।
তোহর মনোরথ তহ্নিক পরান।
নাগর সে জে হিতাহিত জান।।
নখত মলিন বেকতাএত বিহান।
পথ সঞ্চরইত লখতই কে আন।।
পাস পিসুন বস কি করতি লাথ।
কোনে পরি সন্তরতি গুরুজন হাথ।।
ভনই বিদ্যাপতি তখনুক ভান।
আদরি আনি ন খণ্ডিঅ মান।।

অন্তঃকথন:
দূতী বহু প্রয়াসে শ্রীমতীকে অভিসারে নিয়ে এসেছিলেন মাধবের কাছে। তার পর মিলনে কেটে গেছে সমস্ত রাত। তবু মাধবের আকাঙ্ক্ষার তৃপ্তি হয়নি। এদিকে ভোর হয় হয়। দূতী তখন মাধবের উদ্দেশ্যে সাবধানবাণী উচ্চারণ করে বলছেন, তোর আগ্রহ দেখে পরের রমণী কত কৌশলে তোর কাছে এনে দিলাম, এখন সুন্দরী কী করে নিজের ঘরে ফিরবে ভেবে আমার অত্যন্ত চিন্তা হচ্ছে। রাধারানী এমনিতেই ভীতু, ঘরের কাছের ভয়ে সে বাইরে দেখে পর্যন্ত না, তাকে বহু যত্নে এতদূরে অভিসারে নিয়ে এলাম। যার সঙ্গে ক্ষণকালের অবস্থানও মহার্ঘ, তার সঙ্গে সমস্ত রাত কাটালে তবু তোর আশ মিটলো না, এখনো তাকে ছাড়তে চাস না, মনে কি তোর লজ্জা নেই কানাই? তোর এই অতি ইচ্ছে যে তার প্রাণ নেবে এই আশঙ্কা হচ্ছে আমার! কানাই, যার মঙ্গল অমঙ্গল জ্ঞান আছে এই প্রকৃত নাগর! তুই তো দেখি কিছুই বুঝিস না, মলিন তারকা প্রভাতের বার্তা দিচ্ছে, এখন পথে ফিরে যেতে কে দেখে ফেলবে! দুর্জনেরা কাছেই বাস করে, তাদেরকে কি ছলনা করবে? কী করেই বা গুরুজনের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবে রাধারানি! রাধিকার সেই সঙ্কটময় অবস্থার কথা বর্ণনা করছেন বিদ্যাপতি। তিনিও মাধবকে পরামর্শ দিচ্ছেন, আদর করে নিয়ে এসে এখন সেই নায়িকার সম্মান খণ্ডিত কোরো না মাধব!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী