যমুনা কিনারে

ধন জৌবন রস রঙ্গে

ধন জৌবন রস রঙ্গে।
দিন দশ দেখিঅ তলিত তরঙ্গে।।
সুঘটিত বিহ বিঘটাবে।
বাঁক বিধাতা কী ন করাবে।।
ঈও ভল নহিঁ রীতী।
হটেঁ ন করিঅ দুরি পুরুব পিরীতী।।
সচকিত হেরয় আসা।
সুমরি সমাগম সুপহুক পাসা।।
নয়ন তেজয় জলধারা।।
ন চেতয় চীর ন পহিরয় হারা।।
লখ জোজন বস চন্দা।
তৈঅও কুমুদিনি করয় অনন্দা।।
জকরা জাসঁ রীতী।
দুরহুক দুর গেলেঁ দো গুন পিরীতী।।
বিদ্যাপতি কবি গাহে।
বোলল বোল সুপহু নিরবাহে।।

অন্তঃকথন:
দূতী এসে মাধবকে তিরস্কারমিশ্রিত উপদেশ দিয়ে রাধারানীর সঙ্কাশে নিয়ে যেতে চাইছেন। দূতি বলছেন, দেখো মাধব, এ জীবনে ধন যৌবন দশ দিনের, ক্ষণিকের জন্য বিদ্যুৎ রেখার মত উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেয়। তারপর বিধি চাইলে সুন্দর ঘটনাকেও অসুন্দর করে তুলতে পারে, বিধি বাম হলে কি না হয়! এত অনিশ্চয়তার মাঝে তুমি অবুঝ হয়ে পূর্বের প্রেম নষ্ট কোরো না, তোমার এই রীতি মোটেই ভালো নয় মাধব! সুপ্রভুর সঙ্গে মিলনের কথা স্মরণ করে রাধারানী কত আশা নিয়ে সচকিতে পথ চেয়ে আছে। তোমার বিরহে তার দুনয়নে অবিরল জলধারা, বসনের দিকে মন নেই, ভূষণেও না, তার গলা খালি, আহা একখানি হার ও পরে না। কানাই, চন্দ্র তো লক্ষ যোজন দূরে বাস করে, তবু ধরায় থেকেও কুমুদিনী তাকে দেখে আনন্দিত হয়ে প্রস্ফুটিত হয়! যার সঙ্গে যার প্রেম, দূরে গেলেও তা বিনষ্ট হয় না, বরং বিরহে প্রেম দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। দূতী বলতে চাইছেন, তুমি রাধারানীকে ভুলে থাকলেও তার মনে তোমার জন্য প্রেমের অবধি নেই, তুমি অবুঝ হয়ে এই দুদিনের জীবনে এমন অমূল্য প্রেম নষ্ট কোরো না! কবি বিদ্যাপতি দূতীকে নিশ্চিন্ত করে গাইছেন, সুপ্রভু যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সে কথা তিনি অবশ্যই রাখবেন!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী