দেয়াশিনী – বেশে মহলে প্রবেশে
রাধিকা দেখিবার তরে।
সুরক্ত চন্দন কপালে লেপন
কুণ্ডল কাণেতে পরে।।
সাজি ধরল বাম করে।
পিন্ধি রাঙ্গা ধুতি সাজিল যুবতী
রুদ্রাক্ষ জপয়ে করে।।ধ্রু।।
কহে “জয় দেবী ব্রজপুর সেবী
গোকুল-রক্ষক নিতি।
গোপ গোয়ালিনী সুভগদায়িনী
পূজ দেবী ভগবতী।।”
আশীর্ব্বাদ শুনি গোপের রমণী
আইলা তাহার কাছে।
জিজ্ঞাসা করয়ে যত মনে লয়ে
গোপেরা কেমন আছে।।
“সবাকার জয় শত্রু হবে ক্ষয়
মনে ভয় না ভাবিবে।
তোমাদের পতি সুন্দর সুমতি
সবাকার ভাল হবে।।”
সঙ্গেতে কুটিলা আসিয়া জটিলা
পড়িলা চরণে ধরি।
“আমার বধুর পতি মঙ্গল
বর দেহ কৃপা করি।”
শুনি দেয়াশিনী হরষিত বাণী
জটিলা সমুখে কয়।
“বর যে লইবে ভালই হইবে
নিকটে আসিতে হয়।।”
জটিলা যাইয়া আনিল ধরিয়া
আপন বধুর হাতে ।
বসিলা হরষে দেয়াশিনী-পাশে
ঘুচায়া বসন মাথে।।
দেখি দেয়াশিনী বলে শুভবাণী
“সব সুলক্ষণযুতা।
গন্ধর্ব্ব-পাবনী জগদানন্দিনী
রাধা নাম ভানু-সুতা।।”
ধরি ধনী-হাতে মনের আকুতে
নিরখে বদন তার।
দেখিতে দেখিতে আনন্দিত চিতে
মদন কৈল বিকার।।
সাজিটি খুলিয়া ফুলটি লইয়া
বাঁধেন নাগরী চুলে।
“আনন্দে থাকিবে সকলি পাইবে
কলঙ্ক নহিবে কুলে।।”
শুনিয়া সুন্দরী কহে ধীরি ধীরি
“এ কথা কহবি মোয়।
আমার হৃদয়ে ব্যথাটী ঘুচয়ে
তবে সে জানিয়ে তোয়।।”
“একটি শপথি রাখহ যুবতী
কহিতে বাসি যে ভয়।
পর-পতি সনে বেঁধেছ পরাণে
ইহাই দেবতা কয়।।”
হাসিয়া নাগরী, চাহে ফিরি ফিরি
“দেয়াশিনী ঘর কোথা।”
“আমার ঘর হয় যে নগর
বিরলে কহিব কথা।।”
সঙ্কেত বুঝিয়া নয়ান ফিরাইয়া
তাক করে একদিঠে।
নিরখি বদন চিনিল তখন
শ্যাম নাগর টীটে।।
ধীরি ধীরি করি বসন সম্বরি
মন্দিরে চলিলা লাজে।
চণ্ডীদাস কয় সুবুদ্ধি যে হয়
বেকত না করে কাজে।।