যমুনা কিনারে

দেখিয়া মূরতি রূপের আকৃতি

দেখিয়া মূরতি রূপের আকৃতি
মরমে লাগিল তাই।
যেই সে দেখিল তখন হইতে
কিছু না সম্বিত পাই।।
ধবলী লইয়া আইনু চলিয়া
শুনত সুবল সখা।
সেই নবরামা আর পুনবেরি
কখন হইবে দেখা।।
কহিল মরম তেমার গোচরে
শুন হে সুবল তুমি।
মরম বেদন জানে কোন জন
বিকল হইল আমি।।
সেই কথা মোর মনে পড়ি গেল
কহিব কাহার আগে।
কালি হতে মন কেমন করিছে
হৃদয় ভিতরে জাগে।।
শুইতে না হয় নিঁদের আলিস
ক্ষুধা তৃষ্ণা গেল দূরে।
নিরবধি হৃদে সেই সে ভাবনা
থাকি থাকি মন ঝুরে।।
কি হল অন্তরে হিয়া জর জর
বিঁধল সন্ধান শরে।
জর জর কৈল পরাণ পুতলি
মন মত্ত হাতী বরে।।
চণ্ডীদাস বলে শুনহ রসিক
নাগর চতুর কান।
হইবে দরশ করিবে পরশ
ইহাতে নাহিক আন।।

অন্তঃকথন:
বিকল হৃদয়ে কানাই ইতিউতি ঘুরে বেড়ায় যমুনার তীরে। ধবলী ধেনুকে দেখতে পেয়ে সস্নেহে হাত বোলাতে লাগল তার চিকণ পিঠে। এমন সময় সখা সুবল কানুর কাছে গিয়ে তার এরূপ আচরণের কারণ জানতে চাইল। এনে বসাল কদম্বের তলে। অনেক অনুরোধের পর সে বললে, 'সেই যে ধবলীকে খুঁজতে খুঁজতে বৃকভানুপুরে গিয়ে এক অপরূপ মায়া মূর্তি দেখে এলাম তার পর থেকে তো আমি আর নিজের মধ্যে নেই। সেই অপূর্ব আকৃতি মনের গভীরে কেমন যেন গেঁথে গেছে। আমিও বিভোর হয়ে আছি। কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিনে সখা। শোন সুবল, আমি তো চলে এলাম ধবলীকে নিয়ে। কিন্তু সেই নারীর দেখা পুনরায় কি আর পাব? কাউকে তো বলতে পারিনে এসব কথা। প্রাণের সখা তুমি। তাই তোমার কাছেই সব বলছি। এই মরমবেদনায় বিকল হয়ে পড়েছি যে। কেইবা বোঝে এসব! এখন হঠাৎ ধবলীকে দেখে সেসব কথা মনে পড়ে গেল। কাল থেকে মন আমার বড়ই উতলা হয়েছে। হৃদ্-মাঝারে কী যে হয়! না পারি শুতে, না ঘুমোতে। ক্ষুধা-তৃষ্ণা সবই লোপ পেয়েছে। অবিরাম সেই একই ভাবনায় থেকে থেকেই মন কেঁদে ওঠে। মনের মধ্যে কী এমন ঘটল যে প্রতিনিয়ত হৃদয় শরাঘাতে জর্জরিত হয়। প্রাণ বেদনায় কাতর, কিন্তু মন তবু যে বাধা মানে না। প্রমত্ত হস্তীর মতো শৃঙ্খলহীন হতে চায় হৃদয়, মন। এ যে বড় বালাই, সুবল।' সুবল সখার পানে চেয়ে মৃদুমৃদু হেসে চণ্ডীদাস বলেন, 'বলি ও রসিক কানাই, তুমি তো হে বড়ই চতুর! গোপন করেছিলে এতদিন। তবে যার জন্য এত উতলা হয়েছে তার দেখা তুমি পাবে, স্পর্শও করবে। বলছি দেখো, এর অন্যথা কখনো হবে না। বিশ্বাস রাখো সখা।'

পদকর্তা:চণ্ডীদাস
রাগ:সুহই
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:মুনমুন ঘোষ

সন্ধিনী

শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ42