যমুনা কিনারে

জদি অবকাস কইএ নহি তোহি

জদি অবকাস কইএ নহি তোহি ।
কাঁ লাগি ততএ পঠওলএ মোহি।।
তোহর হৃদয় বচন নহি থীর।
নলিনী পাত জইসন বহ নীর।।
আবে কি কহব সখি কহইত অকাজ ।
অথিরক মধথ ভেল সম কাজ।।
আসা লাগি সহত কত সাঠ।
গরুঅ ন হো অমড়াকাঁ কাঠ।।
তোহে নাগরি গুন রূপক গেহ।
অনুদিন বুঝল কঠিন তুঅ নেহ।।
তহ্নিক সতত তোহর পরথাব।
জনি নিরধন মন কতএ ন ধাব।।
ভনই বিদ্যাপতি ই রস গাব।
মগলে কানট কে নহি পাব।।

অন্তঃকথন:
শ্রীমতী মাধবের প্রেমে অস্থির হয়ে শেষ অবধি সখিকে পাঠিয়েছিলেন বার্তা দিয়ে। কিন্তু তারপর থেকে দ্বিধায় কি সঙ্কোচে কিছুতেই আর মাধবের সঙ্গে মিলনে রাজী হচ্ছেন না, খালি বলছেন সময় নেই। এবার সখী তো রেগে যাবেনই, যার জন্য তিনি দূতী হয়ে গেলেন এখন সেই অন্য কথা বললে,পরিশ্রমের আর কি মূল্য থাকে! এদিকে মাধবও আকুল হয়ে বসে আছেন। আর সখীদের তো রাধামাধবের মিলন ঘটিয়েই আনন্দ! তা যখন কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না শ্রীমতীর কারণে, তখন সখী রাধিকাকে অনুযোগ করে বলছেন, যদি তোর কখনোই অবকাশ না থাকে তবে আমাকে কিসের জন্য সেখানে পাঠালি? তোর হৃদয় আর কথা কোনটাই স্থির নয়, পদ্মপাতায় জলের মত, কেমলই বয়ে যায়, এক জায়গায় থাকে না। এখন আর আমি কী বলব সখি, বলতে গেলে অকাজই আমি করলাম, অস্থির মতির লোকের হয়ে মধ্যস্থতা করার মত কাজ, অকাজ ছাড়া আর কি! এখন সে, মাধব, যাকে আমি তোমার কথায় আশা দিলাম, সে আশার জন্য আর কত শাস্তি সহ্য করবে? আমড়ার কাঠ ভারী হয় না, তোমার হৃদয় ঐ আমড়ার কাঠের মত হালকা! তুই নাগরী, রূপ গুণের গৃহ, কিন্তু দিনে দিনে বুঝলাম তোর স্নেহ বড়ই কঠিন! তাঁর মুখে, সর্বদা খালি তোরই কথা, যেন নির্ধনের মন, অর্থ ছাড়া অন্য কোথাও ধাবিত হয় না! ওরে তুই তার নির্ধনের ধনের মত! তাকে আর ফেরাস না! এই রসগান করে বিদ্যাপতি বলছেন, চাইলে ছেঁড়াকাপড়টুকু কে না পায়? অর্থাৎ তুমি তো তাকে ততটুকুও দিচ্ছ না শ্রীমতী!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী