যমুনা কিনারে

চিকুর নিকর তম সম

চিকুর নিকর তম সম
পুনু আনন পুনিম সসী।
নঅন পঙ্কজ কে পতিআওব
এক ঠাম রহু বসী।।
আজে মোঞে দেখলি বারা।
লুবুধ মানস চালক মঅন
কর কী পরকারা।।
সহজ সুন্দর গোর কলেবর
পীন পওধর সিরী।
কনঅলতা অতি বিপরিত
ফলল জুগল গিরী।।
ভন বিদ্যাপতি বিহিক ঘটন
কে ন অদবুদ জানে।
রাএ সিবসিংহ রূপনরাএন
লখিমা দেবি রমানে।

অন্তঃকথন:
শ্রীমতীর রূপদর্শনে মাধবের মনে পূর্বরাগের সঞ্চার হয়েছে। প্রেমে আত্মহারা মাধব শ্রীমতীর আশ্চর্য রূপের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন,শ্রীমতীর কেশরাশি অন্ধকার রাত্রির তুল্য, অথচ মুখমণ্ডলে চন্দ্রের শোভা, আবার নয়ন দুখানি যেন কমল কলি। এখন অন্ধকার, তিমিরবিনাশী চন্দ্রমা আর সূর্যসোহাগী পঙ্কজ যে একত্রে অবস্থান করতে পারে একথা কে বিশ্বাস করবে? রাধারানীর রূপবিভা সেই অবিশ্বাস্যকে সম্ভব করে তুলেছে! বনমালী বলছেন,আজ আমি সেই ব্রজবালাকে দেখলাম, আর সেই থেকে আমার মন লুব্ধ হয়ে আছে। আমার মন আর স্ববশে নেই,কন্দর্প আমার মনকে চালনা করছেন। এর আমি কীই বা প্রতিকার করব? সহজ সুন্দর সুললিত গৌর তনুতে সুকঠিন পীন পয়োধরের শোভা দেখে মনে হল যেন কনক লতায় যুগল গিরি ফলেছে! এ কেমন বিপরীত ঘটনা, একী অদ্ভুত রূপ! এই রূপেই বনমালী আপনাকে হারিয়ে ফেলেছেন সে আর আশ্চর্য কি! বিদ্যাপতি বলছেন, বিধাতার কার্য কলাপ যে মাঝে মাঝে এমন অদ্ভুত হয় সে কথা কে না যানে? রাজা শিবসিংহ আর রানী লখিমা দেবীই তো তার প্রমাণ। তাঁরাও তো জগত মাঝে আশ্চর্য সুন্দর! এই ভাবে বিদ্যাপতি কৃষ্ণের জবানি ধার করে শ্রীমতীর অত্যাশ্চর্য রূপের বর্ণনা যেমন করছেন নিত্য নতুন উপমায়, তেমনই বনমালীর প্রেমিক মনের ছবিও ফুটিয়ে তুলেছেন এই গানে। সবশেষে পৃষ্ঠপোষক রাজা ও রানীর বন্দনা গান করতেও ভোলেন নি।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী