যমুনা কিনারে

ঘরের বাহিরে দণ্ডে শতবার

(সখীর উক্তি)
ঘরের বাহিরে দণ্ডে শতবার
তিলে তিলে আসে যায়।
মন উচাটন নিশ্বাস সঘন
কদম্ব কাননে চায়।।
রাই এমন কেন বা হইল।
গুরু দুরুজন ভয় না মানিল
কোথা কি দেবতা পাইল।।
সদাই চঞ্চল বসন অঞ্চল
সংবরণ নাহি করে।
বসি থাকি থাকি উঠয়ে চমকি
ভূষণ খসিয়ে পড়ে।।
রাজার ঝিয়ারি বয়সে কিশোরী
তাহে কুলবতী বালা।
কিবা অভিলাষ বাড়য়ে লালস
বুঝিতে নারি এ ছলা ।।
তাহার চরিত হেন বুঝি রীত
হাত বাড়াইল চাঁদে।
চণ্ডীদাস কয় করি অনুনয়
ঠেকিলে কালিয়া ফাঁদে।।

অন্তঃকথন:
সখীদের সাথে কলসী কাঁখে ঘরে ফিরছে রাধা। কদিন ধরে বড়ই আনমনা সে। সখীরাও যে বলছে সে কথা। 'জানিস সখী, রাধার কী যে হয়েছে, এক মুহূর্ত স্থির থাকেনা। ঘরে তার মন নেই। দিনের মধ্যে শতেকবার অন্দর ছেড়ে দাওয়ায় এসে দাঁড়ায়। কী যেন খোঁজে, আর ফিরে যায়। না জানি কেন বড় উতলা হয়েছে ওর মন। আর ক্ষণে ক্ষণে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ফিরে ফিরে চায় কদম্ব কাননের দিকে'। 'রাই, তোর কী হয়েছে বলতো সত্যি করে? গৃহে গুরুজনেরা আছেন। তোকে এমন দেখলে কী বলবেন বলতো! ওর উপরে অপদেবতা ভর করেনি তো!'। 'ওরে রাই, শান্ত হ। ক্ষণে ক্ষণে এত চঞ্চল হলে চলবে! আঁচলখানি যে মাটিতে লুটায়!' বসে থেকে থেকে ও এমনি চমকে ওঠে যে ভূষণ খসে যায় অঙ্গ থেকে। রাজার দুলালী, সদ্য কিশোরী রাধাকে কুলবতী বলেই তো জানি। সে যে কোন বন্ধুকে অভিলাস করে এ অনুরাগ দেখায়, তার কিছুই তো বুঝতে পারিনে। বরং মনে হয় এ মেয়ে যেন চাঁদ ধরতে চায়। সখীদের কথা শুনে চণ্ডীদাস মনে মনে হাসেন। বলেন,'যা বলছ, তাতে অনুমান হয়, তোমাদের রাধা কালিয়া ফাঁদেই বন্দী হয়েছে। তাই তোমরা আর উতলা হয়ো না।'

পদকর্তা:চণ্ডীদাস
রাগ:ধানুষী
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:মুনমুন ঘোষ

সন্ধিনী

শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ20