যমুনা কিনারে

খরি নরি-বেগ ভাসলি নাই

খরি নরি-বেগ ভাসলি নাই।
ধরএ ন পারথি বাল কহ্নাই।।
তেঁ ধসি জমুনা ভেলহু পার।
ফূটল বলআ টূটল হার।।
এ সখি এ সখি ন বোল মন্দ।
বিরহ বচনে বাঢ়এ দন্দ।।
কুণ্ডল খসল জমুন মাঝ।
তাহি জোহইতে পড়লি সাঁঝ।।
অলক তিলক তেঁ বহি গেল।
সুধ সুধাকর বদন ভেল।।
তটিনি তট ন পাইঅ বাট।
তেঁ কুচ গাড়ল কঠিন কাঁট।।
ভন বিদ্যাপতি নিঅ অবসাদ।
বচন-কউসলে জিনিঅ বাদ।।

অন্তঃকথন:
রতিরঙ্গ সেরে মাধবের কাছ হতে ফিরেছেন শ্রীমতী, বেশবাস বিস্রস্ত অঙ্গের আভরণ সবই খোয়া গেছে! সখীদের কি আর কিছু বুঝতে বাকি আছে! সখীদের পরিহাসবাক্যের জবাবে রাধারানি আত্মপক্ষ সমর্থন করে রাধারানী লুকিয়ে রাখতে চাইছেন তাঁর গোপন অভিসার। শ্রীমতী বলছেন, খরস্রোতা নদীতে বেগে নৌকা ভাসলো, বালক কানাই নৌকো সামলাতে পারল না। তাই তো জলে পড়ে যমুনা পার হলাম, আর তাতেই হাতের বলয় ভেঙ্গে গেল, গলার হার ছিঁড়ে পড়ল! এ সখি, এ সখি, তোমরা আমায় অমন মন্দ কথা বোলো না! বিরহের কথায় দ্বন্দ বেড়ে গেল। আমার কানের কুণ্ডল যমুনার মাঝে খসে পড়ল আর তাই খুঁজতে খুঁজতে সন্ধে হয়ে গেল। সেইজন্যই তো যমুনার জলে অলকাতিলক সব ধুয়ে গিয়ে মুখ নির্মল চন্দ্রের মত হল! আর সন্ধ্যের আঁধারে তটিনী-তটে পথ খুঁজতে গিয়ে কুচে কঠিন কণ্টক বিঁধে গেল! বিদ্যাপতি রাধারানীর জবাব শুনে বলছেন, আচ্ছা, নিজের পরাজয় মেনে নিলাম, কথার কৌশলে তুমি মোকদ্দমা জয় করলে!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী