যমুনা কিনারে

অহে সখি অহে সখি লএ জুনি জাহে

অহে সখি অহে সখি লএ জুনি জাহে।
হম অতি বালিক আকুল নাহে।।
গোট গোট সখি সব গেলি বহরায়।
বজর কিবাড় পহু দেলহ্নি লগায়।।
তেহি অবসর পহু জাগল কন্ত।
চীর সম্ভারলি জিউ ভেল অন্ত।।
নহিঁ নহিঁ করএ নয়ন ঢর নোর।
কাঁচ কমল ভমরা ঝিক-ঝোর।।
জইসে ডগমগ নলনিক নীর।
তইসে ডগমগ ধনিক সরীর।।
ভন বিদ্যাপতি সুনু কবিরাজ।
আগি জারি পুনি আগক কাজ।।

অন্তঃকথন:
আমাদের নবীনা রাই কিশোরীকে সখীরা নিয়ে চলেছেন অভিসার গৃহে। ধনি তো মিলনভয়ে আকুলা। বারে বারে সখীদের ডেকে বলছেন, ওগো সখি, ওগো সখি আমাকে নিয়ে যেয়ো না, আমি নিতান্ত বালিকা আর নাথ কামাকুল। কিন্তু তাঁর সে অনুনয় না শুনে তাঁকে অভিসার গৃহে রেখে একে একে সব সখী মিলনমন্দিরের বাইরে চলে গেল, প্রভু বজ্রকপাট লাগিয়ে দিলেন। আর সেই অবসরে প্রভু জেগে উঠলেন কামনায়, বস্ত্র সংবরণ করতে শ্রীমতীর জীবনান্ত হল। প্রতিরোধ করে না না বলতে বলতে তাঁর দুনয়নে অশ্রু ঝরতে লাগলো। তবু কৃষ্ণ-ভ্রমর রাইকমলকলিকা নিয়ে টানাটানি করতে লাগল! পদ্মের ওপরে যেমন জল টলমল করে তেমন করে ধনীর অঙ্গ কাঁপতে লাগল। এতেক বর্ণনা করে কবিরাজ বিদ্যাপতি বলছেন, শোনো এ আগুনে একবার পুড়লে জ্বালা জুড়োনোর জন্য আবার আগুনেরই প্রয়োজন হয়। আমাদের মনে হয় এই পদ কিশোরী রাধিকার প্রথম মিলন ভীতির পদ। প্রথম তাই এত ভয়, সে কারণেই বিদ্যাপতির এমন উপদেশ। তিনি বলতে চাইছেন কামানলে একবার পুড়লে সে তাপ জুড়োতে আবার কামেরই প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ তুমি এখন এত নানা করছ একবার এই জ্বলার স্বাদ পেলে বারবার পুড়তে চাইবে! অর্থাৎ এখানে কামবোধ জেগে ওঠার কথা বলতে চাইছেন বিদ্যাপতি। শ্রীমতী মিলনানন্দের অনুভব পাননি বলেই এত প্রতিরোধ। একটি কথা বলার, কামকলার অনুপুঙ্খ বিবরণ সহ এই জাতীয় পদ পাঠ করার সময় আমাদের মাথায় রাখতে হবে বিদ্যাপতি সংস্কৃত কামশাস্ত্রকারদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের অনুসরণ করেছেন মাত্র। এমন পদ রচনার ইতিহাস সংস্কৃত সাহিত্যে বিরল নয়। বিদ্যাপতি সেই ধারা মেনেই এই সকল পদ রচনা করেছেন।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী