যমুনা কিনারে

অবিরল নয়ন গলএ জলধার

অবিরল নয়ন গলএ জলধার।
নব জলবিন্দু সহএ কে পার।।
কি কহব সজনী তকর কহিনী।
কহএ ন পারিঅ দেখলি জহিনী।।
কুচজুগ উপর আনন হেরু।
চাঁদ রাহু ডর চঢ়ল সুমেরু।।
অনিল অনল বম মলয়জ বীখ।
জেহু ছল সীতল সেহু ভেল তীখ।।
চাঁদ সতাবএ সবিতাহু জীনি।
নহি জীবন একমত ভেল তীনি।।
কিছু উপচার মান নহি আন।
তাহি বেআধি ভেষজ পঁচবান।।
তুঅ দরসন বিনু তিলও ন জীব।
জইঔ কলামতি পীউখ পীব।

অন্তঃকথন:
মাধবের প্রেমে শ্রীমতী আকুল, মিলনপ্রত্যাশী। তাঁর সে দশা দেখে সখীরা কি স্থির থাকতে পারেন? তাঁরা তাই দূতী হয়ে মাধবের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন রাধিকার মদনাকুলতা! সখীরা মদনমোহনকে বলছেন, শ্রীমতীর দুনয়ন বেয়ে আবেগের অশ্রুরাশি অবিরল ঝরে চলেছে। নবযৌবনার এই নবাশ্রুরাশি কে সহ্য করতে পারে মাধব? সজনি, তার কাহিনী কি আর বলব? যেমন দেখে এলাম সে যে বর্ণনা করতে পারি না! দেখলাম শ্রীমতী তাঁর অপরূপ মুখচন্দ্রমা উন্নত কুচযুগের ওপর আনত করে রেখেছেন, দেখে মনে হচ্ছে যেন চাঁদ রাহুর ভয়ে সুমেরু পর্বতের উপর গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। মলয় বাতাস শ্রীমতীর কাছে যেন বিষ বমন করছে, আর শীতল চন্দন-লেপ তাঁর কাছে বিষবৎ ঠেকছে! যা কিছু সুশীতল তোমার বিহনে মাধব সে সবই রাধিকার কাছে তীব্র জ্বালাময় হয়ে উঠেছে! কোমল চন্দ্রালোক যেন সূর্যের অপেক্ষাও দহনকারী হয়ে উঠেছে রাধারানীর কাছে! সুবাতাস, চন্দন, চাঁদ এই তিনও যদি এইভাবে সন্তাপিত করে তাহলে যে আর জীবন থাকে না! অন্য কোন উপাচারেই তাঁর কোন উপশম হচ্ছে না! তাঁর ব্যাধির একমাত্র ওষুধ কন্দর্প! সেই কলাবতী রাধিকা এখন যদি পীযূষও পান করেন, তাহলেও সে অমৃতে তিনি জীবন পাবেন না! তোমার দর্শন বিনা শ্রীমতী যে তিলার্ধও বাঁচবেন না মাধব! তুমি, একমাত্র তুমিই পারো মিলনে তাঁর প্রাণ রক্ষা করতে! এই গানে জয়দেবের ছাপ সুস্পষ্ট! ভণিতাহীন এই পদে বিদ্যাপতি, পূর্বরাগ জনিত শ্রীমতির মনোবিকারের এক আশ্চর্য ছবি আঁকলেন সখীদের বার্তার মাধ্যমে!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী