জয়দেব রচিত গীতগোবিন্দ কাব্যের প্রথম আরম্ভ-সর্গের নাম সামোদ দামোদর। দামোদর শব্দটির মধ্যে জননী যশোমতীর দামবন্ধনের স্নেহ-শাসন চিহ্নিত আছে। কৃষ্ণ যখন শৈশব, কৈশোর-পৌগণ্ড ছাড়িয়ে যৌবন-সন্ধিতে নায়ক হয়ে উঠেছেন তখনও এই নামটি ব্রজবাসী জনের আদরের নাম হয়ে উঠেছে। ভাসের নাটকে তাঁকে ব্রজবাসীরা ভ্রাতা হিসেবে মেনে নিয়েও প্রভু দামোদর বা ‘ভর্তা দামোদর’ বলে সম্বোধন করেছে। সেই দামোদরকে জয়দেব কবি নববসন্তের আগমনে ব্রজরমণীদের মধ্যে সখীসঙ্গে রাসরঙ্গে আমোদিত রসমূর্তি হিসেবে কল্পনা করেছেন। কিন্তু দামোদর কৃষ্ণের এই আমোদিত রূপ যে সেই ‘অবতার-লীলা-বীজ’ কৃষ্ণেরই লীলায়িত রূপ সেটা প্রথমেই দশাবতার-স্তোত্র শুনিয়ে জয়দেব বলে দিয়েছেন। প্রথম সর্গের আরম্ভে নাটকীয় নান্দীশ্লোকে রাধা এবং মাধবের কুঞ্জভ্রমণ-মধুরতার বর্ণনা দিয়ে ব্রজকুলের রমণীদের বিলাস-কলা বর্ণনার মধ্যেই যশোমতীর স্নেহলালিত দামোদর দামোদ-দামোদর হয়ে ওঠেন। প্রথম সর্গের শেষে জয়দেব লেখেন—কুঞ্জবিপিনে কৃষ্ণের বিনোদনী কলা-সমন্বিত কেলিরহস্য সকলের শুভ বিধান করুক। দামোদর কৃষ্ণের সামোদ হয়ে ওঠার রহস্যও এখানেই—শ্রীজয়দেব-ভণিতমিদম্-অদ্ভুত-কেশব-কেলি রহস্যম্। এই সর্গেই তিনি ‘কেশব ধৃত-দশবিধরুপ’ আবার এখানেই ‘কেশব-কেলি-রহস্যম্।